চাপ সামলাতে খাদ্যের মজুত ও আমদানি বাড়িয়েছে সরকার

বাংলাদেশে টানা প্রায় তিন বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ বিরাজ করছে, যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনমান ও ভোগব্যয়ে। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP)–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পরিস্থিতি সামাল দিতে অন্তর্বর্তী সরকার খাদ্যের মজুত ও আমদানি বাড়িয়েছে, তবুও বাজার ব্যবস্থাপনা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।

মার্চ মাসে কিছুটা নিম্নমুখী থাকার পর সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৯.৩২ শতাংশ। এর পেছনে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বৃদ্ধি মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে চালের ওপর নির্ভরশীলতা কমে গমের ব্যবহার বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টন গম আমদানি হয়েছে। অন্যদিকে, গত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৮ লাখ টন চাল আমদানি করেছে সরকার, যদিও এর আগের অর্থবছরে কোনো চাল আমদানি করা হয়নি।

WFP জানায়, মার্চ মাসে আলু, কাঁচামরিচ, মুরগি ও সবজির দাম বাড়লেও গম, ডাল, তেল, ডিম, পেঁয়াজ ও চিনির দাম কমেছে। ফলে একজন ব্যক্তির জাতীয় মাসিক খাদ্যব্যয়ের গড় খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৮৯০ টাকা, যা আগের মাসের তুলনায় ২৪ টাকা বেশি।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, স্থানীয় কৃষকদের জন্য প্রণোদনা ও সহায়তা বৃদ্ধি, আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজার তদারক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।

তিনি অভিযোগ করেন, বাজার পর্যবেক্ষণে ভোক্তা অধিদপ্তরের জনবল ঘাটতি থাকায় অনেক সময় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। বাজার তদারকির জন্য সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে কৃষি, বিপণন এবং ভোক্তা অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয় হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জ্বালানির দিক থেকে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। মার্চ মাসে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের গড় দাম ২৮ টাকা কমে হয়েছে ১,৪৫০ টাকা, আর অটোগ্যাসের দাম লিটারে ১.৩১ টাকা কমে হয়েছে ৬৬.৪৩ টাকা।

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা। সরকার জানিয়েছে, চাল আমদানির নিয়ম শিথিল এবং বোরো মৌসুমের ফসল সংগ্রহের পর সরকারি মজুত সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে WFP আশঙ্কা করছে, আবহাওয়াজনিত কারণে আগামী মাসগুলোতেও ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *