২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক ছাপাতে গিয়ে সরকারের গচ্চা গেছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। তদন্তে উঠে এসেছে, বই ছাপা ও কাগজ সরবরাহে জড়িত দুটি সিন্ডিকেট এ অর্থ লোপাটে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ছাপাখানাগুলোর সিন্ডিকেট ‘উচ্চ দর’ দিয়ে সরকারকে গচ্চা দিয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কাগজের মূল্য বাড়িয়ে মিল মালিকরা হাতিয়ে নিয়েছে আরও ৩৪৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি ২০ শতাংশ বই নিম্নমানের কাগজে ছাপিয়ে ৩৫৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত মুনাফা করেছে একটি চক্র।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এনসিটিবির প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি দরে ছাপার কাজ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৪০ শতাংশ টেন্ডারে একজনের বেশি দরদাতা ছিল না। এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, সময়ের অভাবে দরপত্রের প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা যায়নি।
তদন্তে আরও জানা গেছে, নিয়ম না মেনে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানোয় ধরা পড়লেও সংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠান পেয়েছে বিল ছাড়। কালো তালিকাভুক্ত ২৬টি প্রতিষ্ঠান অজানা কারণে ছাড় পেয়েছে।
এদিকে কাগজ সংকটের সুযোগে মিল মালিকরা টনপ্রতি কাগজের দাম ৩০ হাজার টাকা বাড়িয়ে দেশজুড়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। এতে পাঠ্যবই ছাপা তিন মাস বিলম্বিত হয়।
এ পরিস্থিতিতে শুল্কমুক্ত কাগজ আমদানির দাবি জানিয়েছে মুদ্রণ শিল্প সমিতি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে তারা এনসিটিবির তত্ত্বাবধানে কাগজ আমদানির ব্যবস্থা রাখার অনুরোধ জানিয়েছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যানের (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, “কাগজের ঘাটতির কারণে কিছু আমদানি করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এ প্রক্রিয়া চলবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি পাঠ্যবইকে ঘিরে এত বড় দুর্নীতি দেশের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি। তাই অবিলম্বে দায়ীদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মহল।