লন্ডন বৈঠকের পর নতুন অঙ্গীকার বিএনপির

লন্ডনে গত শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ছাড়াও বিচার ও সংস্কার সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। আলোচনায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের দুর্নীতি, গুম, অর্থপাচারসহ নানা অনিয়মের বিচারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছায় বিএনপি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আলোচনার প্রথম ভাগে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে, এবং পরবর্তী একান্ত বৈঠকে বিচার ও সংস্কার ইস্যুতে বিস্তারিত মতবিনিময় হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার যেসব সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তা দলটি স্বাগত জানিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ঐকমত্য কমিশনের কাজেও বিএনপি ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে এবং প্রস্তাবনা প্রদান করছে।

বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, সংস্কার কার্যক্রমকে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে এগিয়ে নিতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে যেসব সংস্কার সম্ভব, তা বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করবে এবং পরবর্তী সরকার বাকি অংশ এগিয়ে নেবে। এ প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বারোপ করেছে বিএনপি।

বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি মনে করে, সময় বেঁধে বিচার করলে তা স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ফলে বিচার বিভাগকেই এ বিষয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে কাজ করতে দিতে হবে। তবে প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে ট্রাইব্যুনাল সংখ্যা এবং লোকবল বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। বিএনপি বিশ্বাস করে, এই সরকারের সময়েই কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার দৃশ্যমান অগ্রগতি সম্ভব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলের দুর্নীতির বিচার প্রশ্নে কোনো আপস নেই। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এসব অপরাধের বিচার সম্পন্ন করা হবে। একই সঙ্গে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের দায়ীদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে।

বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির জানান, নির্বাচনের সময় নির্ধারণ প্রধান আলোচ্য বিষয় হলেও, বিচার ও সংস্কার নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। একান্ত বৈঠকে ড. ইউনূসকে তারেক রহমান আশ্বস্ত করেছেন, সংস্কার নিয়ে সামনে আরও আলোচনা হবে এবং যেটি জাতীয় স্বার্থে উপযোগী বলে প্রতীয়মান হবে, বিএনপি সেটিই গ্রহণ করবে।

বিএনপির নেতারা আশা প্রকাশ করেন, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে “সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়” বা “নির্বাচনের পর সংস্কার থেমে যাবে”— এমন বিতর্কের অবসান ঘটবে। তারা জানান, দলটির ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে আন্তরিকতার প্রমাণ ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে এবং যেকোনো ইতিবাচক পদক্ষেপে সমর্থন থাকবে বিএনপির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *