নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি ঘিরে সেনাবাহিনীর ভূমিকায় যেমন উচ্চ প্রশংসা, তেমনি নানা সমালোচনা ও গুজবও ভেসে বেড়াচ্ছে। তবে সবকিছুর মধ্যেও দেশের শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং গণতন্ত্রে ফেরার পথে সেনাবাহিনী নিজ অবস্থানে অটল রয়েছে।
নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হলে মাঠে সেনাবাহিনীর অবস্থান দীর্ঘ হবে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের প্রত্যাশার চেয়েও দুই মাস বেশি। যদিও তিনি ডিসেম্বরেই নির্বাচন প্রত্যাশা করেছিলেন, তবে বাস্তবতা ভিন্ন। নির্বাচন বিলম্বিত হলেও সেনাবাহিনী পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সেনাপ্রধান সতর্ক করে দিয়েছেন, যেন জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট না হয়, কারণ এতে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। এই বক্তব্যের অপব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা হলেও তিনি এবং সেনাবাহিনী দেশ ও জনগণের পাশে অবিচল।
সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানের ভূমিকায় সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ ঐক্য আরও সুদৃঢ় হয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন সাবেক মেজর জেনারেল কাজী ইফতেখার-উল-আলম। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী শুধুমাত্র শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্যই নয়, বরং দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে কাজ করছে। বর্তমানে যে সরকার দায়িত্ব পালন করছে, সেটি সেনা-সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার—এই বাস্তবতা অস্বীকার করা বোকামি বলেও মত দেন বিশ্লেষকেরা।
একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলেন, অতীতে দীর্ঘ সময় সেনাবাহিনী মাঠে থাকায় প্রশিক্ষণ ও পেশাদারিত্বে বিঘ্ন ঘটেছিল। বর্তমান সেনাপ্রধান সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্রুত নির্বাচনের পক্ষপাতী। কাদা ছোড়াছুড়ি ও রাজনৈতিক বিভেদ যেন সেনাবাহিনীর কাজে বিঘ্ন না ঘটায়, সে ব্যাপারেও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা শুধু একমাত্র ফোর্স যেটা জনগণের জন্য সবসময় মাঠে আছি। আমাদের আক্রমণ নয়, উৎসাহ দিন, উপদেশ দিন।’ তিনি আরও বলেন, হানাহানি ও বিভেদ দেশের জন্য ভয়াবহ, তাই সবাইকে একতাবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
ফরহাদ মজহার তার সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থানের প্ররোচনা দিয়ে যাচ্ছে। সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর ঐক্যই সেই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করেছে। তিনি সতর্ক করে দেন, সেনাবাহিনী ও উপদেষ্টা সরকারের মধ্যে বিভেদ তৈরির যে অপপ্রয়াস চলছে, তা জাতীয় স্বার্থের জন্য বিপজ্জনক।
তিনি বলেন, ‘সেনা সমর্থনের অর্থ জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলন। এই সমর্থন বাস্তবতায় প্রতিষ্ঠিত। সেনাবাহিনীও চায় না দীর্ঘদিন ক্যান্টনমেন্টের বাইরে থাকতে। দীর্ঘমেয়াদি মোতায়েন বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি করে, যা সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।’
সাম্প্রতিক কিছু গুজব ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টার পরও বাস্তবতা ভিন্ন। ঈদুল আজহার দিন সেনাপ্রধান ও প্রধান উপদেষ্টাকে আন্তরিক পরিবেশে দেখা গেছে। একই দিনে সেনাপ্রধান আহত সেনা সদস্যদের দেখতে সিএমএইচ পরিদর্শন করেন এবং বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে সেনাসদস্যদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এতে সেনা সদস্যরা অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হন।
সবশেষে বলা যায়, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী একদিকে যেমন দায়িত্ব পালনে নিরলস, অন্যদিকে জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রারও বলিষ্ঠ সহচর। সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে তারা এক নতুন প্রত্যয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
কৃতজ্ঞতাঃ কালের কণ্ঠ